ভোগ ও লালসা (By The Renowned Astrologer in Kolkata)
একটি সম্পূর্ণ রুপে মন মুগ্ধ পরিবেশ তৈয়ারী করে সু-বৃহৎ সু- সদৃশ্য একটি শ্বেত পাথরের মন্দির স্থাপনা করলাম ! এবং সেই মন্দিরের ভিতর আমার ইষ্ট দেবী কে বিপুল আড়ম্বরের ভিতর প্রতিষ্ঠা করলাম , কত মানুষ আসছেন মায়ের মন্দিরের নানা বিধপূজাউপকরণ নিয়ে এবং মন্দির দেখে কত বাহবা দিয়ে যাচ্ছেন , কিণ্তু কই তাতে কেন আমি মানসিক শান্তি পাচ্ছিনা ! যখনই আমি নিভৃতে নীরবে সেই মন্দিরে বসে আমার ইষ্ট কে হৃদকমলে স্থাপিত করতে চেষ্টা করিতেছি তথাপি আমার মন সেই মন্দির হইতে বাহির হইয়া যাইবার চেষ্টা করিতেছে ! কিণ্তু আগে তো আমার মনের অবস্তা এই রূপ ছিলো না ! যখন আমার জীর্ণ ও শীর্ণকায় মন্দিরের গর্ভগৃহে একাকী নৃভিতে বসিয়া তাঁকে আমার হৃদপদ্মাসনে অনায়াসেই স্থাপিত করে অনাবিল আনন্দে ভাসিয়া যাইতে পারিতাম ! কিণ্তু এখন কেন তাহা আর পারিতেছিনা ? আসলে তখন ছিলো একটি জীর্ণকায় আসন সেই আসনেই উপবিষ্ট হতাম ! আমার সন্মুখে স্থাপিত থাকিত একটি তোবরানো ফাটা একটি কোশাকুশী জরাজীর্ণ পুষ্পপত্র ও সামান্য কয়েকটি মাত্র পূজা সামগ্রী নিয়েই চলতো আমার নিত্য আরাধনা ! কি অনাবিল আনন্দ ছিলো তাতে ! তখন কেউই ছিলো না আমার পাশে,কেউই আসতো না ওই জীর্ণ ও শীর্ণকায় মন্দিরে! তখন শুধুই আমার ইষ্ট দেব দেবীদের কে নিয়ে আনন্দে মন্দিরে বিচরণ করতাম ! তখন কিণ্তু অনেক বারই কাল এসে আমাকে কানে কানে বলতো কিরে এই ভাঙ্গাছোরা মন্দিরের ভিতর তুই বসে কি একাএকা কথাবলিস , হাঁসিস , আনন্দে নৃত্য করিস তুই তো খুবই নিজের টা ভালো বুজিস ! একবারও স্ত্রী ও কন্যার কথা কি তোর মনেও হয়না ! তারা কি কষ্টেনা দিন যাপন করছে , আর তুই কিনা এখানে বসে এত কষ্টে দিন যাপন করছিস ?
আর আনন্দ করে ওই মাটির মূর্তিটার সঙ্গে নৃত্য করছিস , ওঠ উঠেপড় এক বার তুই সম্মতি দে আমি তোকে ঝাঁ চকচকে মন্দির বানিয়ে দিছি , এবং সেখানে প্রচুর ভক্ত সমাগম হবে কত অর্থ আয় হবে মেয়ে ও স্ত্রী তারা তাদের আনন্দ ফিরে পাবে ! বারে বারে ই কালগর্ভ আমাকে আমার পদস্থলন করবার চেষ্টা করে গেছে কিণ্তু তাতে আমি কর্ণপাত করি নাই ! কিণ্তু ষড়রিপুর এক রিপু ( লোভ ) আমার চারিপাশে ঘুর ঘুর করতে করতে কখন যে আমার ভিতর প্রবেশ করে গিয়েছে , তখন আমি ঘুণাক্ষরেও টের পাইনি ! এই করতে করতে আর এক জন আমার কাছে উনি আর এক রিপুর স্বরূপ ( মায়া ) এসে আমাকে গ্রাস করলো ! হটাত করে স্বপ্ন দেখার মতোন আমার আদোরিনি আরাধ্যার সকল বন্ধন মুহূর্তের মধ্যে ছিন্ন হয়ে গেলো ! ধীরে ধীরে আমি কালের গর্ভে আমি প্রবেশ করলাম ! কালগর্ভ এসে প্রবেশ করার সাথে সাথে কত যোগাযোগ আসতে লাগলো , আসতে লাগলো কত টাকার হাতছানি ! মুহূর্তের মধ্যে যে মানুষ টা দৈবিক প্রেমে পাগল ছিলো সে কিণা অর্থ প্রেমে মাতোয়ারা ! একে একে সু সদৃশ্য শ্বেত শুভ্র পাথরেমোড়া মন্দির হোল ! সেই মন্দিরে ব্যাবহৃত সকল দ্রব্য সামগ্রী রুপার বাসনে পরিবর্তন ঘটলো ! কত নামি দামী মানুষরা আসতে লাগলো ! আসতে লাগলো মন্ত্রী আমলারা ! তারা তখন নিজেদের কার্য্য সিদ্ধির জন্য কত দামি দামি উপঢৌকন দিতে লাগলো !
একদিন যে মন্দির ভাঙ্গাচোরা ছিলো , এখন সেই মন্দিরে দামি দামি জিনিস ভর্তি থাকায় ক্যামেরা বসলো মন্দিরের গর্ভগৃহে ! চৌকিদার নিযুত হোল ! আসতে আসতে আমার মন্দির আর আমার থাকলো না ! ক্রমে মন্দিরে ট্রাস্টি বডি তৈরী হোল ! এক দিন সেই ট্রাস্টিই ঠিক করলো মন্দিরের পূজার সময় সীমা , আমাকেও ওরা বেঁধে দিলো আমার আরাধ্যা আদোরিনির সেবার সময় সীমা ! এই পর্য্যন্তই ব্যাস – হটাত করে আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো আমি ধরমড় করে উঠে বসলাম এবং ঘুমের চোখ কচলাতে কচলাতে আমার আদোরিনি আনন্দময়ী দিকে তাকিয়ে বসে আছি আর দু চোখ বেয়ে অশ্রু ধারায় আমার আনন্দময়ী স্নান করছে আর বলছে , ওরে আমি বৈভবের ভোগ লালসায় আমি নেই রে আমার পঞ্চব্যাঞ্জনের দরকার নেই আমাকে তুই তোর ভালবাসার চোখের জলে চান করাবি ! আর পারলে রোজ দুটো করে নকুল দানা দিবি আমি তাতেই সন্তুষ্ট , আমি তাতেই সন্তুষ্ট থাকবো রে ! আমার আর অন্য কোন কিছু চাই না রে বাবা আজ থেকে আমি কেবল তোর ভক্তি টুকুই খাবো রে !!!